ভারতের কেন্দ্রীয় পুলিশ গত রোববার দেশটির ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) সাবেক প্রধান নির্বাহীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, কিছু নির্দিষ্ট ব্রোকারকে আগে লেনদেনের সুবিধা পাইয়ে দিতেন তিনি। প্রায় এক মাস ধরে তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলার তদন্ত করছিল ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
সিবিআইয়ের অভিযোগ, দিল্লির ব্রোকিং সংস্থা ওপিজি সিকিউরিটিজ ও তার প্রোমোটর সঞ্জয় গুপ্ত নিয়ম ভেঙে এনএসইর কো-লোকেশন ব্যবস্থার সুবিধা নিয়েছিলেন। ফলে অন্য ব্রোকারদের থেকে আগে লেনদেনের জন্য লগইন করতে পারতেন এবং তার সাহায্যে অতিরিক্ত মুনাফা পেতেন। এ ধরনের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘটনাতেই দেখা গেছে, গুপ্ত প্রথম লগইন করেছিলেন। ২০১০-১২ সালে হওয়া এই ঘটনায় মুম্বাইয়ে এক্সচেঞ্জের কিছু কর্মী জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের সাহায্যে এই প্রতারণা হতো বলে খবর।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, এনএসইর মতো এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে কয়েক সেকেন্ড আগে হওয়া লেনদেনও অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এ–সংক্রান্ত মামলাতেই এত দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে চিত্রাকে।
রোববার শুনানিতে দিল্লির এক আদালতের বিচারপতি সঞ্জীব আগরওয়াল এই বিষয়টি নিয়ে সিবিআই ও বাজার নিয়ন্ত্রক সেবিকেও ভর্ৎসনা করেছেন। গত চার বছর ধরে মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কেন ঠিকমতো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে সিবিআইকে প্রশ্ন করেছেন তিনি। ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মানুষের পয়সায় ফুর্তি করেছেন। সেই সঙ্গে কো-লোকেশন কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক হওয়া সত্ত্বেও সেবি নরম মনোভাব নিয়েছিল বলেও তাঁর পর্যবেক্ষণ।
মামলার শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই কেলেঙ্কারিতে মানুষের ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে দেশের অর্থনীতি জড়িত। ফলে তাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। আর এ জন্যই আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় জামিনের বিষয়টি অন্যান্য মামলার থেকে আলাদা বলে জানান তিনি। আদালত বলেন, চিত্রার দেশ ছাড়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু যেহেতু এনএসইর এমডি-সিইও পদে ছিলেন তিনি, তাই তথ্য লোপাট ও সাক্ষীকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা বেশি। এসব কারণে আগাম জামিনের আরজি খারিজ করেন আদালত।
এনএসইর সিএফও আনন্দ সুব্রামানিয়াম আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই আনন্দই হিমালয়ের সাধু কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে, যে সাধু চিত্রাকে নিয়ে সিসিলি দ্বীপে সমুদ্র স্নানে যেতে চেয়েছিলেন। তদন্তকারী সংস্থার সূত্র উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আনন্দই সেই ‘সাধু’, যাঁর নির্দেশ (মর্জিমাফিক) অনুযায়ী কাজ করতেন চিত্রা। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চিত্রা এনএসইর এমডি-সিইও থাকাকালীন সংস্থার বহু গোপন তথ্য আনন্দকে ফাঁস করে দিয়েছেন।