অনুসন্ধানী রিপোর্ট

প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের মাধ্যমে গতি ফিরছে পুঁজিবাজারে;নিয়ম বদলের আভাস

Written by sharebazarU

শেয়ারবাজার নিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে, বারবার বৈঠক করেও তা নিরসন হচ্ছে না। দুই সংস্থার এই দ্বন্দ্বনিরসন না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা যখন আতঙ্কিত, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন।

বৈঠকে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত- উল-ইসলাম উপস্থিত থাকবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

শেয়ারবাজারের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা চলে আসছে। এ নিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য। জানা গেছে আগামী সপ্তাহের যেকোনো কার্যদিবসে এই চার শীর্ষ কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীর্ষ চার কর্মকর্তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠক থেকে শেয়ারবাজারের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। সভায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ ( ২০১৩ সালে সংশোধিত)-এর ২৬ এর (ক) ধারার সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার জারির মাধ্যমে বিনিয়োগসীমার প্রচলিত পদ্ধতি পরিবর্তন করা যায় কী-না তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এই ধারায় শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগসীমা বাজার দর ধরে নির্ধারণ করা রয়েছে। কিন্তু এর ফলে বাজার অস্থির হয়ে উঠছে বলে বিএসইসির পক্ষ থেকে তা সংশোধনের দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগসীমা থেকে বন্ডের হিসাব বাদ দেওয়ারও দাবি করে আসছে বিএসইসি।

এই আইনের আওতায় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইকুইটির ওপর ভিত্তি ধরে বিনিয়োগসীমা ধার্য করা হয়েছে। ইকুইটি হলো কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন, মুনাফা বা ফ্রি রিজার্ভের যোগফল। এই ইকুইটির ২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের শেয়ারের বাজার দরকে বিবেচনায় নিতে হয়। শেয়ারের এই দর ধরে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ পদ্ধতির কারণেই বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে বিএসইসি।

বিদ্যমান আইন অনুসরণ করার ফলে হরহামেশা ব্যাংকগুলো বিনিয়োগসীমা লঙ্ঘন করছে। আর সে কারণে প্রায়ই জরিমানা গুণতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে শেয়ার বিক্রির চাপ। তাতে করে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এই নিয়ম বদলানোর জন্য সুপারিশ করে আসছে বিএসইসি। এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির কারণে। এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পর অস্থির শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে। এরকম একটি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যা শেয়ারবাজারের ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় সুখবর।

বিএসইসি বারবার বলে আসছে শেয়ারবাজারকে অস্থিরতা হতে থেকে বাঁচাতে শেয়ারের প্রতিদিনকার বাজার মূল্য নয় বরং ক্রয়মূল্য ধরে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করা হোক। সারা পৃথিবীতে এখন বিনিয়োগসীমার স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে শেয়ারের ক্রয়মূল্য। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমা নিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বন্দ্বটা মূলত এখানেই।

এর আগে গত ০২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বিএসইসির তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক হয়। বৈঠকশেষে বিএসইসির কমিশনার বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে বললেও পরের দিন বাংলাদেশ ব্যাংক তার বক্তব্য সঠিক নয় বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তারপরে আবারও অর্থমন্ত্রনালয়ের সাথে এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠক হয়। সেখানেও কোন সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারেনি দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আর এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠকের পর সিদ্ধান্তে যেতে না পারাটা বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। ফলে বাজারে বড় আকারের পতনও লক্ষ্য করা গেছে। ঠিক সেই মূহুর্তেই সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকের খবরে বিনিয়োগকারীরা আশার আলো দেখতে পারছেন বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা মনে করছেন অতীতের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে দেশের শেয়ারবাজার আবারও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

About the author

sharebazarU

Leave a Comment