ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই ও সিএসই) আওতাভুক্ত এসএমই বা স্মল ক্যাপ প্ল্যাটফর্মের উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এরই ধরাবাহিকতায় সংগঠনটির ওই প্রস্তাবের আলোকে মতামত প্রদানের জন্য সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশসহ (সিডিবিএল) ডিএসই ও সিএসইকে পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।
উল্লেখ্য, মূলত স্মল ক্যাপ প্ল্যাটফর্মে লেনদের প্রক্রিয়া সহজতরকরণ এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
সম্প্রতি ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “স্মল ক্যাপ বোর্ড”-কে আরও প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধন বিবেচনার বিষয়ে চলতি বছরের ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন চিঠি পাঠিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে “স্মল ক্যাপ বোর্ড”-কে আরও প্রাণবন্ত করতে প্রতিষ্ঠানটির উল্লিখিত প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য আপনার মতামত সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিতে প্রেরণ করার পরামর্শ দেওয়া হলো।
বিএমবিএর চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রধান চালিকাশক্তি। এতো বড় অবদান থাকা সত্ত্বেও, এসএমই খাতের কোম্পানিকে প্রায়ই অর্থায়ন পেতে বাধাগ্রস্ত হতে হয়ে। বিশেষ করে জামানতের অভাব, সীমিত অপারেটিং কার্যক্রম এবং উচ্চ ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশে এসএমই খাত প্রসারি হতে পারছে না। তবে অর্থায়নের বিকল্প উৎস তৈরি করতে বিএসইসি সম্প্রতি খুব সফলভাবে এসএমই বোর্ড চালু করেছে। যেখানে এসএমই তাদের ব্যবসার সুবিধার্থে বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে। এটি প্রকৃতপক্ষে এসএমই পৃষ্ঠপোষকদের পাশাপাশি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য একটি বিশাল উদ্ভাবন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, এসএমই বোর্ডের উন্নয়ন বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। তাই এসএমই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের জন্য সশরীরে উপস্থি হয়ে ডিএসই ও সিএসইতে রেজিস্ট্রেশন আবেদন জমা দেওয়ার শর্ত বেশ অসুবিধাজনক। এছাড়া অত্যধিক ন্যূনতম বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা, উচ্চ নিবন্ধন ফি (১০ হাজার টাকা) এবং সর্বশেষ কর পরিশোধের রশিদ জমা দেওয়ার শর্ত বাংলাদেশের এসএমই বাজারের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই ভালো সংখ্যক যোগ্য বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করতে এবং এসএমই বোর্ডকে প্রাণবন্ত করতে নিবন্ধন এবং যোগ্য বিনিয়োগকারী অফার (কিউআইও) পদ্ধতি পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
বিএমবিএ’র প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এসএমই প্ল্যাফর্মে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ও আরো প্রাণবন্ত করতে সেকেন্ডারি মার্কেটে ন্যূনতম বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করা যেতে পারে। আর ব্যক্তি বিনিয়োগকারী আকৃষ্টে ন্যূনতম ১ লাখ টাকার নিট মূল্য থাকার শর্ত সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা কর পরিশোধের রশিদ জমা দেওয়ার শর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স সাবক্রিপশন সিস্টেমে (ইএসএস) বিদ্যমান যোগ্য বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘ, ক্লান্তিকর এবং অসুবিধাজনক। যোগ্য বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধনের সুবিধার্থে অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমবিএ’র মহাসচিব ও বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রিয়াদ মতিন বলেন, যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে স্মল ক্যাপ প্ল্যাটফর্মকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে আমরা কিছু প্রস্তাব বিএসইসিতে পাঠিয়েছি। প্রস্তাবে আমরা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধনের সুবিধার্থে অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করার কথা বলেছি। সেকেন্ডারি মার্কেটে ন্যূনতম বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করার কথা বলেছি। আর রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ডিএসই ও সিএসই’র এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করা কোম্পানিগুলো হলো- মাস্টার ফিড এগ্রোটেক, অরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ওটিসি ফেরত অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিসিং মিলস, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস, হিমাদ্রি, বেঙ্গল বিস্কুট ও নিয়ালকো অ্যালয়।