করোনার প্রথম বছরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মুনাফায় তেমন না বাড়লেও দ্বিতীয় বছরে বেশির ভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ব্যাপক হারে।
২০২১ সালে তালিকাভুক্ত ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য জানতে পেরেছে পুঁজিবাজার এক্সপ্রেস। এর মধ্যে ২২টি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। কেবল দুটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা গত বছরের চেয়ে কম হয়েছে।
এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আয় গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ও সিটি ব্যাংকের আয় বেড়েছে ৫৫ শতাংশের বেশি। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের আয়ও বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
প্রাথমিক তথ্য বলছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালো করেছে মার্কেন্টাইল; গত বছরের তুলনায় মুনাফা তিন-চতুর্থাংশ বাড়াতে পেরেছে তারা। তবে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে বরাবরের মতোই ইসলামী ব্যাংক। তবে মুনাফার প্রবৃদ্ধি খুব একটা বেশি নয়।
গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিক, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিক, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর প্রকাশিত হিসাবে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর সিংহভাগই দারুণ করেছে। চতুর্থ প্রান্তিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে।
অবশ্য পরিচালন মুনাফা কোনো ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই কোনো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। এই মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জোয়ার। নভেম্বর পর্যন্ত ২০২১ সালে বাংলাদেশের আমদানি ৫৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে ছাড়িয়েছে ৩ হাজার কোটি ডলারে। ডিসেম্বরের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে নভেম্বরের প্রবণতার ভিত্তিতে বছরের শেষ মাসে ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ব্যাংকাররা বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমদানি-রপ্তানির জোয়ারে এলসির কমিশন ব্যাংকের মুনাফা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে নভেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে কেবল নভেম্বরেই হয়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৪ বা ৪০৪ কোটি ডলার। এই প্রবণতার ভিত্তিতে গোটা বছরে রপ্তানি ২৫ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরেকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার বলেন, ‘করোনার সময় ব্যাংকগুলো ভয়ে খরচ অনেক কমিয়েছে। ডিপোজিটের বিপরীতে সুদহারও কমেছে। অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানি বাড়ায় এলসি বাবদ আয় হয়েছে অনেক বেশি। এ কারণে ব্যাংকগুলো এবার ভালো মুনাফা করেছে।
পাশাপাশি করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়েছে দুই অঙ্কের ঘর। এর পাশাপাশি করোনার দ্বিতীয় বছরেও ব্যাংকগুলোকে দেয়া ছাড় মুনাফা স্ফীত হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।
এবার বছরের শেষ ভাগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বাড়াতে সহায়তা করেছে। ব্যাংকের সুদকে আয় হিসেবে দেখাতে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো কোনো একক গ্রাহকের কাছ থেকে ২০২১ সালে যে সুদ আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে, তার ২৫ শতাংশ যদি আদায় করতে পারে, তাহলে ওই গ্রাহকের কাছ থেকে সুদ বাবদ পাওয়া অর্থের পুরোটাকে আয় হিসেবে দেখাতে পারবে।
নতুন নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফা করা সহজ হয়েছে। কারণ সাধারণত পুরো টাকা আদায় না হলে তা খেলাপি হয়ে যায়। সুদও আয় খাতে নেয়া যায় না।
কোন ব্যাংক কী হারে মুনাফা বাড়াল
মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবার মুনাফা করেছে ৭২২ কোটি টাকা। গত বছর পরিচালন মুনাফা ছিল ৪১১ কোটি টাকা। মুনাফা বেড়েছে ৩১১ কোটি বা ৭৫ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক গত বছর পরিচালন মুনাফা করেছিল ৭০০ কোটি টাকা। ৫৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে এবার মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।