সপ্তাহজুড়ে অধিকাংশ মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দর পতন হয়েছে। কিন্তু পতনের বাজারেও লাগামহীন ছিল স্বল্প মূলধনী, লোকসানি ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ার দর। এর মধ্যে ৭ কোম্পানির শেয়ার দর ছিলো বেশি লাগামহীন। কোন কারণ ছাড়াই এসব লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়াটা অস্বাভাবিক। এ শেয়ারগুলোতে কারসাজির আলামত স্পষ্ট বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আজিজ পাইপস, রহিমা ফুড, দেশ গার্মেন্টস, সোনালী আঁশ, স্টাইলক্রাপ্ট, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও আনলিমা ইয়ার্ন।
কোম্পানিগুলোর কতৃপক্ষ বলছে, কোন কারণ ছাড়াই কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই কোম্পানিগুলোর শেয়ার বড় ঝুঁকিপূর্ণ। মুনাফা ও ডিভিডেন্ডের দিক থেকে দুর্বল প্রকৃতির। এছাড়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এমন কোম্পানিও রয়েছে এর মধ্যে। ভালো কোম্পানির শেয়ার দর বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভালো কোম্পানিগুলোর সাথে টক্কর দিয়ে এসব দুর্বল লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ার পিছনে কারসাজি স্পষ্ট। তাই কোম্পানিগুলোর শেয়ার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দুরে থাকা বাঞ্চনীয়। অন্যথায় তাদের বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিজ পাইপস, দেশ গার্মেন্টস ও স্টাইলক্রাপ্ট লোকসানি কোম্পানি। আর রহিমা ফুড, সোনালী আঁশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও আনলিমা ইয়ার্ন ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার শীর্ষ বাসিন্দা।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে আজিজ পাইপসের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কবে কখন এই কোম্পানিটির উৎপাদন চালু হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এছাড়া, ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া আজিজ পাইপস সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও চলমান হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (২০২০ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়েছে। এই প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ৭ পয়সা। লোকসানের পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১৪ টাকা ২৮ পয়সা, যা ২০২০ সালের জুন শেষে ছিল ১৪ টাকা ২২ পয়সা।
আরো জানা যায়, মাত্র ৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি আজিজ পাইপস ইতিমধ্যে ২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা পুঞ্জিভূত লোকসানে জড়িয়ে পড়েছে। এই কোম্পানিটি পুঞ্জিভূত লোকসানসহ অন্যসব লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখটে কত যুগ লাগবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া লোক’সানের কারণে আজিজ পাইপস, দেশ গার্মেন্টস, স্টাইলক্রাপ্টের মুল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) নেগেটিভ। নেগেটিভ পিইর কারণে কোম্পানিগুলো ডেঞ্জারজোনে অবস্থান করছে।।
অন্যদিকে, রহিমা ফুড, দেশ গার্মেন্টস, সোনালী আঁশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও আনলিমা ইয়ার্ন ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার সর্বোচ্চ শীর্ষ অবস্থানের শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রহিমা ফুডের পিই ১০৬৬, সোনালী আঁশের ১০২৬, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ৩৮৩ এবং আনলিমা ইয়ার্নের ১৩৫।
মুনাফা ও ডিভিডেন্ডের দিক থেকে কোম্পানিগুলোর ইতিহাস একেবারেই সুখকর নয়।স্বল্প মূলধনীর তকমা থাকার কারণেই কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বছরজুড়ে আকাশচুম্বী থাকে। এখনতো দর উল্লম্ফনের কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেকোন সময় শেয়ারগুলোর বড় পতন নেমে আসতে পারে। তখন বিনিয়োগকারীরা দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়বে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে রহিমা ফুড গত পাঁচ বছরের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দেয়নি। গত বছর লিগ্যাসি ফুটওয়্যারও ডিভিডেন্ড থেকে বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করেছে। গতবছর ডিভিডেন্ড দিয়েছে আজিজ পাইপস ১ শতাংশ ক্যাশ, আনলিমা ইয়ার্ন ২ শতাংশ ক্যাশ, দেশ গার্মেন্টস ৩ শতাংশ বোনাস ও সোনালী আঁশ ১০ শতাংশ ক্যাশ।