এ নিয়ে গত ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ৬ দিনই সূচক পড়ল। মাঝে গত বৃহস্পতিবার এক দিন কেবল ৮ পয়েন্ট সূচক বেড়েছিল। আগের দিন ৪৯টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছিল ৩০৩টির দর। একদিন পর ৫৫টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২০৫টির দর।
পুঁজিবাজারে চলমান দরপতনের মধ্যে আরও একটি হতাশার দিন পার করল বিনিয়োগকারীরা। তিনশর কাছাকাছি কোম্পানির দরপতনে টাকা হারিয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজারে চলমান দরপতনের মধ্যে আরও একটি হতাশার দিন পার করল বিনিয়োগকারীরা। তিনশর কাছাকাছি কোম্পানির দরপতনে টাকা হারিয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা।
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দর সংশোধন শুরু হওয়ার পর থেকে শুরুর দুই ঘণ্টা শেয়ার দর বেড়ে পরে পতনের যে ধারাবাহিকতা, সেই বিষয়টি দেখা গেল আবার।
আগের দিন ৫০ পয়েন্টের পর দ্বিতীয় দিন সোমবার সূচক পড়ল ৫৬ পয়েন্ট। এক পর্যায়ে সূচক পড়ে যায় ৭০ পয়েন্ট। তবে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে সেখান থেকে বাড়ে কিছুটা।
বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। সেখান থেকে দিন শেষের অবস্থানের পার্থক্য ৮৬ পয়েন্ট।
দিন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৯৯ পয়েন্ট। এই অবস্থান গত ১৯ আগস্টের পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৭৬০ পয়েন্ট।
এ নিয়ে গত ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ৬ দিনই সূচক পড়ল। মাঝে গত বৃহস্পতিবার এক দিন কেবল ৮ পয়েন্ট সূচক বেড়েছিল।
আগের দিন ৪৯টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছিল ৩০৩টির দর। একদিন পর ৫৫টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২০৫টির দর।
সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও ভাটা দেখা গেছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে একদিনে যেখানে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতো, সেটি এখন টেনেটুনে এক হাজার কোটি টাকায় নেমেছে।
দিন শেষে লেনদেন দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এটি গত ২৮ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। সেদিন লেনদেন ছিল ৯৪০ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল আগের দিন আরও বড় পতন ঠেকানো ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি, বেক্সিমকো ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার, রবি, এনআরবিসি, এতদিন টানা বাড়তে থাকা বেক্সিমকো লিমেটেড, পাওয়ারগ্রিড, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পূবালী ব্যাংকও সূচক টেনে নামানোয় প্রধান ভূমিকায় ছিল।
এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক পড়েছে ২৭.৮৬ পয়েন্ট।
অন্যদিকে বিকন ফার্মা, ওরিয়ন ফান্মা, গ্রামীণ ফোন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, জেনেক্সিল, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট ইবিএল, ইউনিলিভার, গোল্ডেনসহ ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারদর অল্পবিস্তর বাড়ায় সূচকেও সামান্য কিছু পয়েন্ট যোগ হয়েছে।
এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক বেড়েছে ৯.৯ পয়েন্ট।
সবচেয়ে বেশি ৮.৩৭ পয়েন্ট দরপতন হয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের। এছাড়া ৭ শতাংশের বেশি তিনটি, ৬ শতাংশের বেশি আরও তিনটি, ৫ শতাংশের বেশি ৮টি, ৪ শতাংশের বেশি ১২টি, ৪৪টি কোম্পানি ৩ শতাংশের বেশি, ৬৯টি কোম্পানি ২ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।
আরও ৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে এবং ৫১টি কোম্পানি দর হারিয়েছে এক শতাংশের কম।
বিপরীতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত সেনাকল্যাণ সংস্থার শেয়ার দর। গোল্ডেনসনের দর বেড়েছে ৯.৯৫ শতাংশ। ৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে আমরা নেটওয়ার্ক ও সাফকো স্পিনিংয়ের দর।
এছাড়া ৫ শতাংশের বেশি বেগেছে ওরিয়ন ফার্মা, তিন শতাংশের বেশি বেড়েছে ৫টির দর, ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে ৬টির দর, এক শতাংশের বেশি বেড়েছে ১৬টির দর। বাকি ২৭টির দর বেড়েছে একেবারে নগণ্য হারে।
লেনদেনে শীর্ষ ১০
রোববারের মতো সোমবারও লেনদেনে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে বিবিধ খাতের বেক্সিমকো লিমিটেড। লেনদেন শেষে বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। যদিও কোম্পানির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় কমেছে দশমিক ৫৭ শতাংশ।
বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার দর ১৭৩ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭২ টাকা ৯০ পয়সা।
লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে ছিল জেনেক্সিল ইনফোসিস। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এই কোম্পানিতে এতটা আগ্রহ কখনও দেখা যায়নি। কোম্পানিটির মোট লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। শেয়ার দর ১৩৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৩ টাকা ৯০ পয়সা।
লেনদেনের শীর্ষে থাকা দশ কোম্পানির মধ্যে এদিন মাত্র তিনটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। যার মধ্যে জেনেক্সিল।
তৃতীয় স্থানে ছিল ব্যাংক খাতের এনআরবিসি ব্যাংক। লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে ব্যাংকটির শেয়ার দর ৩ শতাংশ কমে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৮ টাকা ৭০ পয়সা।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের ওরিয়ান ফার্মার লেনদেন হয়েছে ৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
ব্যাংক খাতের আরেক কোম্পানি আইএফআইসি ব্যাংকও লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানির একটি ছিল। ব্যাংকটির লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।
লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকোফার্মাও। কোম্পানিটির শেয়ার দর ২.২২ শতাংশ কমে ২২৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২১৯ টাকা ১০ পয়সা।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ লিমিটেডে (বিএটিবিসি) লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়া লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
লেনদেনর শীর্ষে থাকা দশ নম্বরে ছিল বস্ত্র খাতের মালেক স্পিনিং, যার মোট লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
দাম বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০
সোমবার সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে ছিল মিশ্রাবস্থা। খাত ভিত্তিক বিবেচনায় এদিন বিমা খাতের দুটি ও ওষুধ রসায়ন খাতের দুটি কোম্পানি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলো ছিল বিভিন্ন খাতের।
দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল সদ্য লেনদেন শুরু হওয়া সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। শেয়ার দর ১১ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সা।
দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে ছিল প্রকৌশল খাতের গোল্ডেনসন, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৫৪ শতাংশ। শেয়ার দর ১৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা।
সাফকো স্পিনিং পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের একটি কোম্পানি। এদিন বস্ত্র মোট ৬টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। কমেছে ৪৬টি কোম্পানির। শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৫২ শতাংশ। প্রতি শেয়ারে যোগ হয়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা।
তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি আমরা নেটওয়ার্ক দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে ছিল চতুর্থ অবস্থানে। সোমবার কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৮.২৭ শতাংশ।
ওরিয়ন ফার্মা ছিল দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে পঞ্চম স্থানে। রোববার কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৯২ টাকা। সেখান থেকে ৫.২১ শতাংশ দর বেড়ে হয়েছে ৯৬ টাকা ৮০ পয়সা।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের ই জেনারেশনের শেয়ার দর বেড়েছে ৩.৭১ শতাংশ। এছাড়া বেঙ্গল উইশরের দর ৩.৪৭ শতাংশ, বিকনফার্মার দর ৩.৪৫ শতাংশ, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.২৭ শতাংশ ও জেনারেশন নেক্সটের দর বেড়েছে ৩.২২ শতাংশ।
দরপতনে শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধির পাশাপাশি এদিন শীর্ষ দশের প্রথমে ছিল আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ফার্মা এইড, যার শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৭.৩৯ শতাংশ।
দর পতনের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, যার শেয়ারদর কমেছে ৭.৩৩ শতাংশ। দাম ৩২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা।
স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের দর কমেছে ৭.১৪ শতাংশ। এছাড়া পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার দর কমেছে ৬.৯৬ শতাংশ। দাম ১৬৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৫৩ টাকা ৬০ পয়সা।
ন্যাশনাল ফিড মিলসের শেয়ার দর ৬.৩৬ শতাংশ, মুন্নু ফেব্রিক্সের দর ৬.২৭ শতাংশ, বিমা খাতের কোম্পানি গ্রিনডেল্টার দর ৫.৬৯ শতাংশ, এসকে ট্রিমসের দর ৫.৫৮ শতাংশ ও জনতা ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে যথাক্রমে ৫.৫১ শতাংশ।