সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাচ্ছে যে কারণে দেশের শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলা হচ্ছে। কিন্তু যদি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কা অনেক এগিয়ে রয়েছে। শ্রীলঙ্কার কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে ২৯৬টি কোম্পানির তালিকাভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জটির সূচকের পরিমাণ ৮১০০ পয়েন্টের ওপরে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৪৯টি কোম্পানির তালিকাভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে সূচকের পরিমাণ ৬ হাজার ৫০০ এর কিছু বেশি। সাড়ে ৩’শ কোম্পানির বিপরীতে বাংলাদেশের সূচকের পরিমাণ সাড়ে ৬ হাজার। অন্যদিকে ৩’শ কোম্পানির বিপরীতে শ্রীলঙ্কার সূচকের পরিমাণ ৮ হাজারের ওপরে। যদি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ১০ হাজারের ওপরে থাকতো তাহলে বলা যেতো শ্রীলঙ্কার মতো রয়েছে। কিন্তু এখানেতো শ্রীলঙ্কার চেয়েও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ।
পৃথিবীর কোন দেশের শেয়ারবাজারই জুয়াড়ি ছাড়া নেই। একমাত্র আমরাই বড় বিনিয়োগকারী বা যারা শেয়ার ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হয়েছে তাদের গেম্বলার বলি। অন্যান্য দেশের এই গেম্বলারদেরকেই স্মার্ট বিনিয়োগকারী বলা হয়। কেউ যদি গুগলে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ট্রেডারদের তালিকা খোঁজ করে তাহলে জেসি লিভারমোরের নাম এক নম্বরে আসবে যিনি ১৯২৯ সালে শেয়ারবাজার ধসের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছিলেন। ওয়ারেন্ট বাফেট থেকে শুরু করে বিশ্বের অনেক বড় বড় শেয়ার ব্যবসায়ীরা এই জেসি লিভারমোরকে আইডল মানেন। শেয়ার ব্যবসা করে বিশ্বের বড় ব্যবসায়ী হিসেবে যারা পরিচিত হয়েছেন তাদের জীবনী এবং টিপস বই আকারে ছাপা হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে যারা এরকম করতে চেয়েছেন আমরা তাদের জুয়াড়ি বা গেম্বলার হিসেবে পরিচিত করিয়েছি।
আমাদের শেয়ারবাজার শুধু পিছিয়েই নেই অনেক পিছিয়ে আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা আমরা বাঙ্গালী হিসেবে একটু বেশি আবেগী। যতই গুজব-হুজুগ এড়িয়ে চলার কথা বলা হয় না কেন আমরা আসলে এর থেকে বের হতে পারিনি। তাই এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মশকরা করে যাচ্ছে। বারংবার বৈঠকের আয়োজন, মুখের কথার ফুলঝুঁড়ি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বোকা বানানো হচ্ছে।
সেদিন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বাজার মধ্যস্থাকারীদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে নতুন বিনিয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংক, সিকিউরিটিজ হাউজ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো নাকি এই রমজানে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করবে। কিন্তু রমজানের এক ভাগ শেষ হলেও সেই বিনিয়োগের কোন নমুনা দেখা যাচ্ছে না। মার্কেট স্ট্যাটাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগসহ আইসিবি’র সাপোর্ট দেওয়ার কথা প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু বাজারের চিত্র তা বলে না। এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিকরা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মশকরা করতে বেশি পছন্দ করছে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সেই মশকরার অতলে নিজেদের পুঁজি হারিয়ে ফেলছে।
বিএসইসি বাজারকে গতিশীল করার জন্য যারপর নাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এক শ্রেণীর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সেই চেষ্টাকে ব্যর্থ করার জন্য বাজারকে ফেলে দিচ্ছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পুঁজিবাজার এক্সপোজার নিয়ে নতুন নির্দেশনা দিতে যেন বাধ্য হয় সেজন্য আরেকটি গ্রুপ মার্কেটে সেল প্রেসার তৈরি করছে। সবমিলিয়ে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। এমন এমন ইস্যু দেখিয়ে বর্তমানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলানো হচ্ছে; সামনে আবার এমন না হয়ে যায় যে বড় একজন গেম্বলার তার স্ত্রী’র সঙ্গে ঝগড়া করলো ওমনি শেয়ারবাজারে তার কারণে পতন হলো!!!