চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেহেতু আমদানি রপ্তানি করলে অবশ্যই বীমা করতে হয়। তাই এই বিপুল পরিমাণ টাকার ক্ষতিপূরণ ইন্সুরেন্স কোম্পানি গুলোকেই দিতে হবে। এতে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোা অবস্থা বেশ নাজুক পর্যায়ে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বীমা বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন জানিয়েছেন, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত আসা ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পলিসির মধ্যে একটির বীমা অঙ্ক ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এই পলিসির আওতায় থাকা সম্পদ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত (টোটাল লস) হয়েছে।
আরেকটি পলিসির বীমা অঙ্কের পরিমাণ ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা (১ ডলার= ৮৯.২৪ টাকা) । এর মধ্যে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ অক্ষত থাকলেও বাকী ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে- বাকী সম্পদের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’র সিনিয়র সহসভাপতি ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম শাহীন জানিয়েছেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে সাধারণত আমদানী করা ও রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত মালামাল রাখা হতো। যা এক্সপোর্ট ইন্স্যুরেন্সের আওতায় পড়ে এবং বড় বীমা কোম্পানিগুলো সাধারণ এসব পলিসি ইস্যু করে থাকে।
ইমাম শাহীন আরো বলেন, সাধারণত আমদানি-রপ্তানির সকল পণ্যই বীমার আওতায় থাকে। তাই এই অগ্নিকাণ্ডে বড় অঙ্কের বীমা দাবি পরিশোধ করতে হবে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিগুলোকে। কারণ, এতে অনেক সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। তিনি বলেন, সম্পদের ক্ষতিপূরণ দেয় নন-লাইফ বীমা কোম্পানি। অন্যদিকে হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের জীবনের বীমা করা আছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে লাইফ বীমা কোম্পানি।
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, বীমার নিয়ম অনুসারে সেখানে সার্ভে হবে। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানির পাশাপাশি পুনর্বীমা কোম্পানিও সার্ভেয়র পাঠাতে পারে। যেহেতু এটা বড় দুর্ঘটনা, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও অন্যকোন সার্ভেয়র নিয়োগ করতে পারে।
তিনি বলেন, সার্ভে শেষে চূড়ান্তভাবে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ হলে বীমা কোম্পানি গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করবে- এটাই নিয়ম। এক্ষেত্রে পুনর্বীমা করা থাকলে পুনর্বীমা কোম্পানি তার অংশ পরিশোধ করবে। আমরা আশা করছি- সঠিকভাবে তদন্ত হবে এবং চূড়ান্তভাবে ক্ষতি নিরূপনের পর সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিগুলো যথাসময়ে তাদের দাবি পরিশোধ করবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতিতে গ্রাহক পড়েছেন এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তার দায় নিতে বাধ্য,তাই বর্তমান বীমা কোম্পানিগুলোকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এতে অনেকে গ্রাহকের দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বড় ধরণের লোকসানে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে যার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারের বীমাখাতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।